
Table of Contents
স্ট্যাটিক এবং ডাইনামিক ওয়েবসাইট এর মধ্যে পার্থক্য কি আমরা অনেকেই জানিনা। স্ট্যাটিক এবং ডাইনামিক ওয়েবসাইটের মধ্যে বেশ কিছু পার্থক্য রয়েছে। তাই, আমি আজ স্ট্যাটিক ওয়েবসাইট এবং ডাইনামিক ওয়েবসাইট এর পার্থক্য নিয়ে আলোচনা করবো।
ওয়েবসাইট কত প্রকার ও কি কি?
ওয়েবসাইটের গঠনের উপর ভিত্তি করে ওয়েবসাইটকে দুই প্রকারের হয়ে থাকে। যথা:
১। স্ট্যাটিক ওয়েবসাইট (Static Website)
২। ডাইনামিক ওয়েবসাইট (Dynamic Website)
স্ট্যাটিক ওয়েবসাইট
স্ট্যাটিক ওয়েবসাইট সাধারণত শুধুমাত্র HTML ভাষা দ্বারা গঠিত হয় । স্ট্যাটিক ওয়েবসাইটের কন্টেন্টগুলো স্থির এবং অপরিবর্তনশীল অবস্থায় থাকে । স্ট্যাটিক ওয়েবসাইট তৈরি করতে ওয়েব প্রোগ্রামিং এবং ডাটাবেস ডিজাইন করতে হয় না। এ ধরণের সাইটে কোন অ্যাপ্লিকেশন থাকেনা। স্ট্যাটিক ওয়েবসাইট এর পেইজ ওয়েবসার্ভার এ হোস্ট করা থাকে এবং ব্রাউজার এর রিকোয়েস্ট অনুযায়ী ওয়েবসাইটের পেইজগুলো লোড হয় । এ ধরনের ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্টে HTML বা CSS ব্যবহৃত হয়। সাধারণত ছোট ওয়েবসাইটের ক্ষেত্রে স্ট্যাটিক ওয়েবসাইট ব্যাবহার করা হয়। বিশাল ওয়েবসাইটের ক্ষেত্রে যেখানে শত শত পেজ থাকে সেখানে ম্যানুয়ালি প্রতিটি পেজ আপডেট করা কষ্টকর। সেক্ষেত্রে ডাইনামিক ওয়েবসাইট এর ক্ষেত্রে খুব সহজেই ডাটাবেজ আপডেট করেই একাধিক পেজ একসাথে আপডেট করা সম্ভব।
স্ট্যাটিক ওয়েসাইটের সুবিধাসমুহঃ
১। এ ধরনের ওয়েবসাইট খুব সহজে ডেভেলপ করা যায়।
২। স্ট্যাটিক ওয়েবসাইট যেকোনো ওয়েব ব্রাউজারে খুব দ্রুত লোড হয়।
৩। এ ধরনের ওয়েবসাইটে ডেটাবেজ থাকে না ফলে সর্বাধিক নিরাপত্তার সহিত তথ্য সরবরাহ করা যায়।
৫। খুব সহজেই সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন করা যায়।
৬। সহজেই ওয়েব পেইজের ডিসাইন লে-আউট পরিবর্তন করা যায়।
৭। এসব ওয়েবসাইট থেকে খুব কম নেট স্পীডেও খুব দ্রুত ডেটা ডাউনলোড করা যায়।
৮। স্ট্যাটিক ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্ট খরচ তুলনামুলক কম হয়।
স্ট্যাটিক ওয়েসাইটের অসুবিধাসমুহঃ
১। কন্টেন্ট আপডেট করতে প্রচুর সময় লাগে।
২। ওয়েবসাইটের আকার বৃদ্ধি পেলে কন্টেন্টগুলো সহজে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে যায়।
৩। ওয়েব পেইজ ডিজাইনিং অত্যান্ত ব্যায়বহুল, কষ্টসাধ্য এবং সময়সাপেক্ষ।
৪। স্ট্যাটিক ওয়েবসাইটে কেবলমাত্র একমুখী কমিউনিকেশন হয়।
৫। ব্যবহারকারীরা নিজের চাহিদামত তথ্য পরিবর্তন করতে পারে না।
ডাইনামিক ওয়েবসাইট
ডাইনামিক ওয়েবসাইট সাধারণত ওয়েব প্রোগ্রামিং এর কোড অনুযায়ী কাজ করে । যখন একটি ওয়েব সার্ভার ডাইনামিক সাইটের জন্য রিকোয়েস্ট পায় তখন এটি একটি সফটওয়্যার বা এপ্লিকেশনের কাছে পাঠিয়ে দেয় রিকোয়েস্ট সম্পূর্ণ করার জন্য । তখন, সফটওয়্যারটি নির্দেশ অনুসারে কাজ করে । এই বিশেষ সফটওয়্যারকে বলা হয় অ্যাপ্লিকেশন। ডাইনামিক ওয়েবসাইটের পেজগুলো স্থির থাকে না এবং প্রোগ্রামিং কোডের নির্দেশ অনুযায়ী ডাইনামিক বা স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিবর্তিত হয়ে থাকে । ডাইনামিক ওয়েরসাইট তৈরি করার জন্য প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ ব্যবহার করা হয় । যেমন- www.facebook.com এই সাইটে গেলে আমরা বিভিন্ন মানুষের দেয়া স্ট্যাটাস, ফটো ইত্যাদি দেখতে পারি এবং এইগুলা কিছুক্ষন পর পর পরিবর্তিত হয় এইটাই ডায়নামিক ওয়েবসাইটের বৈশিষ্ট্য ।
ডাইনামিক ওয়েবসাইট তৈরি করার জন্য ক্লাইয়েন্ট সাইড বা সার্ভার সাইড প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ ব্যাবহার করা হয়।
ক্লায়েন্ট সাইড স্ক্রিপ্টিং ব্যবহারকারীর ইনপুটের ভিত্তিতে ক্লায়েন্ট কম্পিউটারে ব্রাউজারে কাজ করে থাকে। আর সার্ভার সাইড প্রোগ্রামিং ওয়েব সাইটের ডাটাবেজে কাজ করে থাকে। ডাইনামিক ওয়েবসাইট তৈরি করার জন্য HTML ভাষার সাথে PHP, ASP, Perl, JavaScript প্রভৃতি স্ক্রিপ্টিং ভাষার প্রয়োজন হয়।
ই-কমার্স, ব্লগ, নিউজ পত্রিকা প্রভৃতি সাইটগুলো ডাইনামিক ওয়েবসাইটের উৎকৃষ্ট উদাহরণ। অর্থাৎ যেসব সাইটে প্রতিনিয়ত কন্টেন্ট পরিবর্তন করতে হয় সেক্ষেত্রে ডাইনামিক ওয়েবসাইট তৈরি করা উপযুক্ত। বর্তমানে WordPress, Joomla, Drupal প্রভৃতি সিএমএস দিয়ে তৈরি সকল ওয়েবসাইটই ডাইনামিক ওয়েবসাইট।
ডাইনামিক ওয়েবসাইটের সুবিধাসমুহ-
১। ব্যবহারকারীর চাহিদা অনুযায়ী পেইজ এর কন্টেন্ট পরিবর্তন হয়। অর্থাৎ কন্টেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (সিএমএস) এর ব্যাবহার হলো ডাইনামিক ওয়েব সাইটের বড় সুবিধা।
২। তথ্য বা সাইটের কন্টেন্ট খুব দ্রুত আপডেট করা যায়।
৩। নির্ধারিত ব্যবহারকারীদের জন্য নির্ধারিত পেইজ প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা যায়।
৪। ব্যবহারকারীদের নিকট হতে ইনপুট বা তথ্য নেওয়ার ব্যবস্থা থাকে।
৫। অনেক বেশি তথ্যবহুল হতে পারে।
৬। আকর্ষণীয় এবং ইন্টাআক্টিভ পেজ লে-আউট তৈরি করা যায়।
৭। যে কোন সময় যে কোন ধরনের তথ্য বা মন্তব্য আপডেট করা যায়।
৮। ডাইনামিক ওয়েব সাইটে অনেক ধরনের ফাংশন যুক্ত করা যায়।
ডাইনামিক ওয়েবসাইটের অসুবিধাসমুহ-
১। ডেটাবেজ এবং বিভিন্ন গ্রফিক্স উপাদান যোগ করার ফলে ব্যবহারকারীর ব্রাউজারে লোড হতে বেশি সময় নেয়।
২। এ ধরনের ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্ট তুলনামুলক জটিল ও সময়সাপেক্ষ।
৩। ডাইনামিক ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্ট ও হোস্টিং খরচ বেশি হয়।
আশা করি, স্ট্যাটিক এবং ডাইনামিক ওয়েবসাইটের মধ্যে পার্থক্য ও এদের সুবিধা-অসুবিধা সমূহ বুঝতে পেড়েছেন। আপনি যদি ওয়েব ডিজাইন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট শিখতে চান তাহলে আপনাকে প্রথম দিকে প্রচুর স্ট্যাটিক ওয়েবসাইট তৈরি করা শিখতে হবে। তাহলে আপনি একটি ওয়েবসাইটের গঠন সম্পর্কে জানতে পারবেন। লেখাটি ভাল লাগলে কমেন্ট করবেন।