
স্টিফেন হকিং এর কথা বলার ভয়েস সিন্থেজারটি অনলাইনে মুক্ত করেছে ইন্টেল। আমরা সবাই জানি যে, বিখ্যাত বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং নড়া-চড়া সহ কথা বলতেও অক্ষম ছিলেন। ২১ বৎসর বয়সে কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটিতে অধ্যয়ণকালে তিনি দূরারোগ্য এএলএস জেনেটিক নিউরো ব্যধিতে আক্রান্ত হয়ে, ধীরে ধীরে জীবস্মৃত পঙ্গু সত্ত্বায় পরিনত হয়ে যান। এ সত্ত্বেও তিনি অসীম মানসিক ক্ষমতা ও কঠিন প্রত্যয়ে, উনার বিজ্ঞান সাধনা চালিয়ে যান। বিশেষ ভাবে নির্মিত হুইল চেয়ারে বসে ভয়েস সিন্থেজার যন্ত্রের সাহায্য নিজের ভাষা ব্যক্ত করে তিনি বিশ্ববাসীকে জানিয়ে যান,— মহাবিশ্ব সৃষ্টির নূতন তথ্য, বিগ ব্যাং ও ব্ল্যাক হোল তত্ত্ব। এ সম্পর্কিত উনার গ্রন্থের বিক্রি ছাড়িয়ে যায়, ১০ মিলিয়ন কপিরও বেশী!
তার কথাগুলো বিজ্ঞানের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ণ। তাই সেটা শোনার জন্য ইন্টেল তাকে একটি ভয়েস সিন্থেজার সফটওয়্যার বানিয়ে দেন। এটা দিয়েই তিনি তার ভার্সিটিতে ক্লাস নেয়া, সেমিনারে লেকচার দেয়া সহ সকল কাজ পরিচালনা করতেন। ভয়েস সিন্থেজার সফটওয়্যারটি ইন্টেল অনলাইনে উন্মুক্ত করে দিয়েছে। এটি উইন্ডোজ এক্সপি সহ এর উপরের যেকোনো অপারেটিং সিস্টেমে চালানো সম্ভব।
‘মোটর নিউরন ডিজিজ’ নামে এক বিরল রোগে আক্রান্ত স্টিফেন হকিং। আর এ রোগের ফলে স্বাভাবিক হাঁটাচলা থেকে শুরু করে কথা বলার শক্তি পর্যন্ত হারিয়ে ফেলেন তিনি। একমাত্র তার হাতের কয়েকটি আঙুল তিনি স্বাভাবিকভাবে নাড়াতে পারেন। আর এই আঙুলের সাহায্যেই তিনি তার মনের কথা লিখে ফেলেন। সফটওয়্যারটি সেটি যান্ত্রিক কণ্ঠস্বরে রূপান্তরিত করে প্রকাশ করে। বিখ্যাত কম্পিউটার চিপ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ইন্টেল বিশেষভাবে এই সফটওয়্যার তৈরি করে দেয় হকিংয়ের জন্য। এসিএটি (অ্যাসিস্টিভ কনটেক্স- এয়ার টুলকিট) নামের এই সফটওয়্যার এবার ইন্টেল সর্বসাধারণের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছে। ওপেন সোর্স এই সফটওয়্যারটি এখন যে কেউ বিনামূল্যে ডাউনলোড করে নিতে পারবেন, একই সঙ্গে উন্নতি সাধন করতে পারবেন নিজের মতো।
ইন্টেলের মতে, মোটর নিউরনের মতো ভয়াবহ সব রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য এক আশার আলো হতে পারে এসিএটি। আর প্রতিনিয়ত উন্নয়ন এবং পরিবর্তন পারে এই সফটওয়্যারটিকে আরো বেশি ব্যবহারসুলভ করে গড়ে তুলতে। ইন্টেলের ‘অ্যান্টিসিপেটরি কম্পিউটার ল্যাব’-এর প্রধান প্রকৌশলী লামা ন্যাচম্যানের মতে, ‘ওপেন সোর্স হিসেবে এই সফটওয়্যারের লক্ষ্যই হলো ডেভেলপারদের স্বাচ্ছন্দ্যে এর উন্নতি সাধনের সুযোগ দেয়া, যেটি আমরা অনেক বছরের পরিশ্রমে পেয়েছি’। তবে এই সফটওয়্যার পূর্ণাঙ্গভাবে ব্যবহার করতে বেশকিছু ব্যয়বহুল হার্ডওয়্যারের প্রয়োজন পড়বে, যেমন ফেসিয়াল রিকগনিশন সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার। তবে আশার ব্যাপার, ওপেন সোর্স এই সফটওয়্যারটির উন্নয়নে এরই মধ্যে ডেভেলপাররা কাজ শুরু করে দিয়েছেন। আর এর মধ্য দিয়ে অদূর ভবিষ্যতেই সাধারণ প্রতিবন্ধী মানুষের ব্যবহারযোগ্য হতে পারে এসিএটি।
সোর্স কোড ডাউনলোড https://github.com/intel/acat
যে কেউ চাইলে গিটহাব থেকে সফটওয়্যারটির সোর্স কোড ডাউনলোড করে নিতে পারেন।